দাবা খেলা কি হারাম ? এমন প্রশ্নের উত্তর হলো- হ্যাঁ, ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক দাবা খেলা হারাম।
হযরত বুরায়দা (রাঃ) হতে বর্ণিত সুলুল্লাহ সাঃ এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি দাবা খেলে সে যেনো তার নিজের হাতকে শুকরের মাংস এবং রক্তের মধ্যে প্রবেশ করালো। (সহীহ মুসলিম)
ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক মহান রাব্বুল আলামীন মূর্তী হারাম করেছেন। আর দাবা খেলার সব গুটিগুলো মূর্তির আকৃতিতে তৈরি। অপরদিকে দাবা একটি নেশার খেলা। আর ইসলাম ধর্মে সকল নেশা ই হারাম। একবার খেলা শুরু করলে সময় কিভাবে কেটে যায় মানুষ বোঝেই না! শয়তান সবকিছু ভুলিয়ে দেয়। এসব খেলার মধ্যে থাকলে নামাজ কালাম ও পড়া হয় না। দাবা খেলা কি হারাম? উপরোক্ত আলোচনা থেকে তার উত্তর আমরা পেয়ে গেছি। চলুন এখন দাবা খেলা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসি..
দাবা খেলার উৎপত্তি
দাবা খেলার উৎপত্তি কোথা থেকে হলো এর সঠিক ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারেনি। উৎপত্তির সূচনা নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। তবে অধিকাংশ লোকের ধারনা মতে প্রাচীন ভারত বর্ষেই দাবা খেলার জন্ম হয়েছে। দাবা খেলার উৎপত্তির খোঁজ করতে যেয়ে প্রাচীন আমলের কিছু দাবার গুটি পাওয়া গিয়েছে কিন্তু এর বেশি আর কিছু জানা যায়নি। তবে ইতিহাসবিদদের মতে ভারত, পারস্য কিংবা চীন থেকেই দাবা সূচনা হয়েছে।
খ্রীস্টপূর্ব ৩ হাজার সালে দাবার মতো আরেকটি খেলার প্রচলন ছিলো। তার নাম ‘শতরন্জ’। প্রাচীন সময়ে দাবার মতো এই শতরঞ্জ খেলার প্রচুর জনপ্রিয়তা ছিলো। সে সময়ে দেশের শাসকেরা এই শতরঞ্জের চাল দিয়ে রাজনৈতিক দলে প্রভাব বিস্তারের পথ বের করে ফেলতো। তবে অনেকের মতে চতুর্থ কিংবা ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে ভারত বর্ষ থেকেই দাবার জন্ম হয়।
দাবা খেলার নিয়ম
দাবা হচ্ছে বুদ্ধিমত্তার খেলা। প্রতিপক্ষের গুটিগুলো খেয়ে ফেলার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে কোনঠাসা করে ফেলার খেলার নাম হলো দাবা। ৬৪ টি ঘরের সমন্বয়ে দাবা খেলার কোর্ট হয়। এই ৬৪ টি ঘরগুলো দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি ঘর হালকা অন্যটি গাঢ়। অথবা একটি ঘর সাদা, অন্য ঘরটি কালো। মন্ত্রী, নৌকা, হাতি, ঘোড়া ও বোড়ের সমন্বয়ে ১৬ গুটির একটা সৈনিক দল নিয়ে গঠিত এই দাবা খেলা বেশ জনপ্রিয়। চতুর্থ কিংবা ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে এখন অবধি এই খেলা প্রচুর জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দর সব জায়গায় ই এই খেলার প্রভাব রয়েছে। অন্যান্য খেলার মতো এই দাবা খেলার ও নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। যা বিশ্ব দাবা ফেডারেশন ফিদে কর্তৃক নির্ধারিত। চলুন তাহলে দাবা খেলার নিয়মগুলো জেনে আসি..
দাবার কোন গুটি কেমন মান
হাতি এবং নৌকার তুলনায় মন্ত্রী একটু বেশি শক্তিশালী। তবে নৌকা এবং হাতি একসাথে মিলিত হলে মন্ত্রী তখন কম শক্তিশালী। প্রতিপক্ষের মন্ত্রী বাদে অন্য কোনো গুটির জন্য মন্ত্রীকে চাল দিলে বিপদে পড়তে হয়। মন্ত্রী, নৌকা এবং হাতি একসাথে চলাফেরা করলেও মন্ত্রী শক্তিশালী হওয়ার দুটো কারণ রয়েছে- প্রথমত; হাতি এবং নৌকার তুলনায় চলাফেরায় বিচক্ষণতা রয়েছে মন্ত্রীর বেশি। কারণ হাতি এবং নৌকা দুইবার মিলিয়ে যতটুকু যেতে পারে, মন্ত্রী একবারেই ততটুকু যেতে সক্ষম। আরেকটা বিষয় হলো হাতি সবসময় এক কালারের ঘরেই যেতে পারে। দ্বিতীয়ত; হাতি এবং নৌকা দুই দিক থেকে তার উপর আক্রমণ হওয়াকে ঠেকাতে পারে। কিন্তু মন্ত্রী একদিক ছাড়া ঠেকাতে পারেনা।
বোড়ে তার প্রথম চালে দুই ঘর যেতে পারে। এবং প্রতিপক্ষের বোড়ে সেখানে থাকলে তা মাড়িয়ে চলে যেতে পারে। বোড়ে কে আড়াআড়িভাবে নিয়ে যাওয়া যায়। দাবা খেলায় সৈন্য সোজাসুজি চলে কিন্তু গুটি খেতে গেলে আড়াআড়ি খায়। সৈন্য শুধু এক ঘর ই যেতে পারে। ঘোড়া অন্য সব গুটিগুলো থেকে আলাদা চলাফেরা করে। সোজা দুই ঘর যাওয়ার পর এক ঘর ডানে বা বামে যায়। দাবা খেলার সব গুটির মধ্যে রাজা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুটি। কিন্তু সবচেয়ে দূর্বলগুকোর একটি হলো রাজা। উপরে, নিচে, কোনাকুনি যে কোনো দিক থেকে একঘর যেতে পারে। রাজা যদি অন্য গুটি দ্বারা আক্রমণের স্বীকার হয়, তখন তাকে চেক বলে।
দাবার গুটি সরানোর নিয়ম
দাবা খেলার প্রতিযোগিতা
ষোড়শ শতকে প্রথম দাবা প্রতিযোগিতা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম দাবা প্রতিযোগিতা হয়। দাবা খেলার সুচনা লগ্ন থেকেই দাবার জনপ্রিয়তা বিপুল। গ্রাম, শহর, ঘর, ক্লাব যে কোনো জায়গায় বসলেই দাবা খেলার ছোটখাটো আয়োজন চোখে পড়তো। বর্তমানে দাবা খেলার এত পরিমাণ উন্নতি হয়েছে যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ কিছু প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়। সেগুলো হলো-
দাবা খেলার নিয়ন্ত্রক
জনপ্রিয় সব খেলার তালিকা হলে দাবা খেলার নাম ও তার মধ্যে অন্যতম। বিপুল জনপ্রিয়তা পাওয়া এই খেলা বিশ্বব্যাপি স্বীকৃতি পেয়েছে। বর্তমানে অলিম্পিক এবং ফিদে আন্তর্জাতিক দাবা খেলার আয়োজন করে থাকে। দাবা খেলা কে বিশ্বে ফিদে দাবা ফেডারেশন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
কয়েকজন সেরা দাবা খেলোয়াড়
আমাদের যত মাতামাতি তা সব ই ফুটবল এবং ক্রিকেট নিয়ে। ফুটবল এবং ক্রিকেটের বাইরেও আরো অনেক দারুন দারুন খেলা রয়েছে। সেরকমই এক জনপ্রিয় খেলা দাবা। দাবা খেলার সেরা মানের কিছু খেলোয়াড়ের নাম আজকে আমরা জানবো। চলুন তাহলে জেনে আসি।
খেলোয়াড়ের নাম | দেশ |
নিয়াজ মোরশেদ | বাংলাদেশ |
বিশ্বনাথ আনন্দ | ভারত |
জিয়াউর রহমান | বাংলাদেশ |
ববি ফিশার | যুক্তরাষ্ট্র |
রাণী হামিদ | বাংলাদেশ |
দিব্যেন্দু বড়ুয়া | ভারত |
রিফাত বিন সত্তার | বাংলাদেশ |
নাইজেল শর্ট | ইংল্যান্ড |
কাসপারভ | সোভিয়েত |
সূর্য্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায় | ভারত |
কারপভ | সোভিয়েত |
ম্যাগনাস কার্লসেন | নরওয়ে |
দাবা খেলার মধ্যে অসংখ্য গুটি রয়েছে, তারমধ্যে
মন্ত্রী (♛) হলো দাবা খেলার সবচেয়ে শক্তিশালী গুটি।
দাবা খেলা কি হারাম? এই প্রশ্নের উত্তর শুরুতেই আপনাদেরকে তা জানিয়েছি। দাবা খেলা বা অন্যান্য যে কোনো খেলা নিয়ে আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে তা জানাতে পারেন।
আমাদের সাথে থাকুন।
স্বাধীন স্পোর্টস (Sadhin Sports)